কাজী মুহাম্মদ ঈসা মাহমুদ
বাবা মায়ের কাছে সন্তান হলো চোখের কাজল।
চোখ থেকে পানি গড়ালে যেমনি কাজল ফ্যাকাশে করে দেয় কপলকে,
তেমনি সন্তানের গায়ে ময়লা লাগলে বাবা-মায়ের অন্তর জলে।
একদিন বন্ধুদের সাথে মাছ ধরার জন্য, কেঁচো উঠাতে গিয়েছিলাম।
বাসায় ফিরতেই রেগে গেলেন বাবা।
শাস্তি, এক পায়ে দাঁড়া।
আমিতো না বুঝতেই সারা
বাম হাতে মারলেন এক থাবা, আধাঘন্টা এক পায়ে খাড়া।
এটা ছিল থ্রি ফোর এর কথা।
তারপর কোনদিন মারেননি।
দাখিল পাশ করে আলিমে ভর্তি হলাম।
বাবা মেট্রিক পাস তো দূরের কথা,
পঞ্চম শ্রেণি পাশ করেছেন কিনা জানিনা।
ঢাকাতে বিল্ডিং তৈরির ঠিকাদারি ব্যবসা।
জীবনের অধিকটা সময় ঢাকাতেই কাটান।
মাঝে মাঝে আমাদের জন্য টাকা পাঠান।
আমি যখন দিব আলিম পরীক্ষা,
বাবার যেন কাটছিল না অপেক্ষা।
বংশের মধ্যে সর্বোচ্চ শ্রেণি অতিক্রম করছি আমি,
আর বাবা নিজেকে মনে করছেন অনেক দামি।
পরীক্ষা দেখতে ঢাকা থেকে চলে এলেন পটুয়াখালীর গলাচিপাতে।
তখন বাবাকে দেখে আমার এতো ভালো লাগছিল তা ভাষায় বোঝানো যাবে না।
আলিম পাস করলাম।
মাঝখানে অনেক ঝড় যাওয়ার পরও,
ফাজিল পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হলাম।
বাবা বললেনঃ যদি ঠিক মত পড়ালেখা করতে,
হয়তো এর চেয়েও ভাল কিছু হতে পারত।
একমি তে চাকরি নিলাম।
জামিনদার হিসেবে দু'জন ব্যক্তি এবং কিছু জমির কাগজ দিতে জমা হবে।
বাবা এক টুকরো জমির কাগজ হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
তুমি যা কিছুই করো এটুকু জমির বেশি ক্ষতি করো না।
বাবা বোঝাতে চাইলেন অন্যায় থেকে বেঁচে থাকো।
এরপর বাবার সাথে মাত্র কয়েক মিনিট কথা হয়েছে, তা আবার মোবাইল ফোনে।
সেই তো শেষ কথা,
যেখানে থাকিস ভালো থাকিস।
কামিল পরীক্ষার আগে, চাকরিতে দশমিনা ডিউটিতে।
এমন সময় ছোট ভাই শাহিনের ফোন এলো,
ভাই আপনি কই?
আব্বা এক্সিডেন্ট করেছে, ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসছি, আপনি আসুন।
কিছুক্ষণ পর বাড়ি থেকে ফোন এল, ঈসা তুমি কই?
আমি বললাম ঢাকা যাচ্ছি।
অপর পাশ থেকে উত্তর এল, যেতে হবে না বাড়ি এসো।
কেন প্রশ্ন করলে, উত্তর হয় আসলেই জানবে।
আমি বললাম বাবা এক্সিডেন্ট করেছে, আমাকে ঢাকা যেতে হবে।
তারা বললেন যেতে হবে না বাড়িতে এসো।
আমার আর বুঝতে বাকি নেই। কিছুক্ষণ রুমের মধ্যে চিৎকার করে কাঁদতাম।
দিনটা ছিল ৭ জুলাই ২০১১
দুপুরবেলা।
পাশের রুমের এক ভাইকে সাথে নিয়ে রনগোপালদী পৌঁছলে, ছোট চাচা ইউসুফ কাজী, আমাকে নিয়ে বাড়ি আসেন।
পরের দিন সকালবেলা ছোট ভাইয়েরা, বাবাকে নিয়ে বাড়ি আসলো।
সেখানে যেন শোকের ছায়ায় আচ্ছাদিত হয়ে যায় পুরো বাড়ি।
বাবাকে নিজ হাতে পুকুরপাড়ে দাদার পায়ের কাছে রাখলাম।
ছোট ভাইদের কান্নায় নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে, আবারো চিৎকার করে কাঁদতাম।
সেইতো বিদায় চির বিদায়, বিদায় জানালাম বাবাকে, আজো বাবা শুয়ে আছে , তার বাবার পায়ের কাছে।
/
0 Comments